Header Ads

সিকিম সম্পর্কে সকল তথ্য ইতিহাস ও ভ্রমণ গাইড - বাংলানিবন্ধ Sikkim

 সিকিম সম্পর্কে সকল তথ্য ইতিহাস ও ভ্রমণ গাইড - বাংলানিবন্ধ Sikkim


বাংলাদেশের সবচেয়ে নিকটবর্তী বরফের দেশ হল সিকিম। সিকিম এর তিনভাগের দুইভাগ অঞ্চল বরফে ঢাকা। অধিকাংশ বাঙালি সারা জীবনে কখনো তুষারপাত দেখেনি। আপনি যদি বাংলাদেশ থেকে সব থেকে কাছের কোনো বরফের দেশে বেড়াতে যেতে চান তাহলে আপনাকে যেতে হবে ভারতের সিকিমে। কারণ ঢাকা থেকে সিকিমের রাজধানী গ্যাংটক এর দূরত্ব মাত্র ৫৫০ কিলোমিটার। কয়েক বছর আগেও বাংলাদেশীদের জন্য সিকিম ভ্রমণ নিষিদ্ধ ছিল, সাম্প্রতিক সময়ে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর থেকে বহু বাংলাদেশী পর্যটক বরফের স্বাদ নেওয়ার জন্য সিকিমে ভ্রমণ করছে। বাংলানিবন্ধের আজকের আয়োজনে থাকবে বাংলাদেশের সবচেয়ে কাছে অবস্থিত বরফের রাজ্য সিকিম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য ও ইতিহাস।

সিকিম ভ্রমণ ও সেখানে কী কী দেখার আছে? :

 
সিকিম ভ্রমণ ও সেখানে কী কী দেখার আছে

ভারতের অনিন্দ্যসুন্দর এলাকাগুলোর মধ্যে সিকিম অন্যতম সিকিম অর্থ নতুন জায়গা বা নতুন বাড়ি। সিকিমের আয়তন ৭০৯৬ বর্গকিলোমিটার অর্থাৎ আয়তনের বিচারে সিকিম ভারতের দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম প্রদেশ। আয়তন এর হিসেবে বাংলাদেশ সিকিমের তুলনায় প্রায় ২০ গুণ বড়। বাংলাদেশ-ভারত সহ পৃথিবীর যেকোন জায়গা থেকে সিকিম যেতে চাইলে প্রথমেই আপনাকে শিলিগুড়ি যেতে হবে। কারণ শুধুমাত্র শিলিগুড়ি করিডোর এর মাধ্যমেই সিকিম রাজ্যটি ভারতের মূল ভূখণ্ডের সাথে সংযুক্ত হয়। বাংলাদেশ থেকে শিলিগুড়ি যাওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর ব্যবহার করা। কারণ বাংলাবান্ধা বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের বিন্দু এবং বাংলাবান্ধা বন্দর থেকে শিলিগুড়ি শহরের দূরত্ব মাত্র 15 কিলোমিটার। শিলিগুড়ির তরাই অঞ্চল পেরিয়ে পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে সিকিমে যেতে হয়। সিকিম রাজ্যটি চারটি প্রশাসনিক অঞ্চলে বিভক্ত সেগুলো হল পূর্ব সিকিম, উত্তর সিকিম, দক্ষিণ সিকিম এবং পশ্চিম সিকিম। এই চারটি জেলার জলবায়ুতে বহু বৈচিত্র দেখা যায় ঋতুভেদে সিকিমের তাপমাত্রা সাধারণত -৫ ডিগ্রি থেকে 25 ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করে। তবে এখানকার সুউচ্চ পর্বতশিখরের তাপমাত্রা মাইনাস ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমে যেতে পারে।

সিকিমের জেলাগুলোর মধ্যে উত্তর সিকিমের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সবচেয়ে মনমুগ্ধকর। হিমালয় পর্বতমালার অসাধারণ সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় উত্তর সিকিম থেকে। সবগুলো জেলার মধ্যে এটিই সবচেয়ে বড় শুধু তাই নয় এই একটি জেলার আয়তন বাকি তিনটি জেলার সম্মিলিত আয়তন এর চেয়েও বড়। সিকিম রাজ্যের সবচেয়ে বেশি তুষারাবৃত পর্বতগুলো উত্তর সিকিমেই দেখা যায়। উত্তর সিকিমে শুধু ভারতের সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ নয় বরং সমগ্র পৃথিবীর তৃতীয় সর্বোচ্চ পর্বত চূড়া কাঞ্চনজঙ্ঘার অবস্থান যার উচ্চতা ২৮০০০ ফুটেরও বেশি। সে কারণে বছরের অধিকাংশ সময় সিকিমের পাহাড়চূড়া গুলো বরফে ঢাকা থাকে। সিকিমের দর্শনীয় যায়গা গুলোর ভেতর রয়েছে লাচেন, লাচুং, কাটাও, ইয়াম্থং ভ্যালী গুরুদংবার লেক ইত্যাদি।  

সিকিম ভ্রমণে যাওয়ার আদর্শ সময়

চীন এবং নেপালের সাথে সীমান্ত থাকার কারণে এই অঞ্চলের পর্যটন ব্যবস্থা ভারতীয় সেনাবাহিনী দ্বারা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এছাড়া শীতকালে অধিক তুষারপাতের কারণে অধিকাংশ জনপ্রিয় পর্যটন স্থানগুলোতে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ থাকে। মার্চ থেকে অক্টোবর মাস হল সিকিম ভ্রমণ এর প্রধান মৌসুম কারণ এ সময়ে সিকিমের সমস্ত জায়গায় অনায়াসে যাওয়া যায়। তবে পর্যটন মৌসুমে আপনি বরফে ঢাকা শ্বেতশুভ্র সৌন্দর্য থেকে বঞ্চিত হবেন। শীতকালে ঘুরে বেড়ানো খানিকটা কষ্টকর হলেও বরফের সৌন্দর্য দেখতে চাইলে ও এর মজা নিতে এই সময়ের বিকল্প নেই।

সিকিমের সৌন্দর্য 

 
সিকিমের সৌন্দর্য

সিকিমের রাজধানী গ্যাংটক পূর্ব সিকিম জেলার অন্তর্গত। গ্যাংটক শব্দের অর্থ হলো পাহাড়চূড়া, হিমালয় পর্বতের সুউচ্চ পর্বতশৃঙ্গ গুলোর মাঝখানে মনোরম পরিবেশে গ্যাংটকের অবস্থান। এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। অথচ বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পাহাড় চূড়া সাকাহাফং এর উচ্চতা মাত্র সাড়ে তিন হাজার ফুট। তার মানে সিকিমের রাজধানী শহর বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ থেকেও ২০০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত। সিকিমের রাজধানী শহরটি খুবই পরিষ্কার এবং ছবির মতো সুন্দর। অনেক সময় আপনার মনে হবে না এটি ভারতের কোন শহর, কিছু ক্ষেত্রে গ্যাংটকের পরিচ্ছন্নতা এবং পরিবেশ দেখে আপনার ইউরোপের কোন শহর বলে মনে হতে পারে। গ্যাংটকের যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং আরামদায়ক জলবায়ুর কারণে শহরটি সিকিমের প্রধান পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে। গ্যাংটকের আশেপাশে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে যার সবগুলো জায়গা ঘুরে দেখতে চাইলে আপনার কমপক্ষে দুই থেকে তিন দিন সময় লাগবে। গ্যাংটকের নিকটবর্তী সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা হল সাঙ্গু লেক। এই লেক টি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। তুষারাবৃত পর্বতের মাঝে থাকা এই লেকটি শীতকালে সম্পূর্ণ জমে বরফ হয়ে যায়। সাঙ্গু লেক সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের এই আর্টিকেল টা পড়ুন সাঙ্গু লেক সম্পর্কে বিস্তারিত
 
সিকিম রাজ্যটি তিন দিক থেকে অত্যন্ত খাড়া পাহাড় দ্বারা পরিবেষ্টিত এখানে নিম্নভূমি খুব কমই আছে। সিকিমের অসংখ্য পাহাড়ের মাঝে ছড়িয়ে রয়েছে অগণিত ঝরনা। শীতকালে বহু ঝরনাও জমে বরফ হয়ে থাকে। বরফ গলা এসব জলপ্রপাত নিঃসন্দেহে আপনাকে মুগ্ধ করবে। এখানকার ছোট বড় অনেক ঝর্ণা মিলিত হয়ে বেশ কয়েকটি নদীর সৃষ্টি হয়েছে। এসব নদী বহু পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়। সিকিমের নদীগুলোর মধ্যে রয়েছে রাঙ্গিত, লোনাক, তালুং এবং লাচুং। এই সবগুলো নদী আবার এক সাথে মিলিত হয়ে সৃষ্টি হয়েছে তিস্তা নদী। সিকিমে উৎপন্ন এই তিস্তা নদী পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং পেরিয়ে নীলফামারী জেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এরপর তিস্তা ব্রহ্মপুত্র নদের সাথে মিলিত হয়েছে। সিকিমের এইসব পাহাড়ি ঝরনা ও নদী আমাদের বাংলাদেশের জনজীবনেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখে। বর্ষাকালে সিকিমে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের প্রভাবে বাংলাদেশে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়। 

সিকিমের সংস্কৃতি 

সিকিমের সংস্কৃতি


ভারতীয় রাজ্য গুলোর মধ্যে সিকিমে সবচেয়ে কম সংখ্যক লোক বসবাস করে। সিকিমের জনসংখ্যা মাত্র সাড়ে ছয় লক্ষ। এখানকার জনগণ সাধারণত বিচ্ছিন্ন গ্রামীণ জীবন যাপনে অভ্যস্ত। সিকিমের সবচেয়ে বড় জনবসতি হলো গ্যাংটক এ ছাড়া হাতে গোনা কিছু স্থানে বড় জনবসতি রয়েছে। সিকিমের সংস্কৃতি সরাসরি তিব্বতের বৌদ্ধ সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত। তবে অতীতে নেপালি আগ্রাসনের কারণে সিকিমে নেপালি হিন্দু সংস্কৃতি সবচেয়ে প্রভাবশালী। বর্তমানে সিকিমে প্রায় ৬০ শতাংশ লোক হিন্দু ৩০ শতাংশ লোক বৌদ্ধ এবং বাকিরা খ্রিস্টান সহ অন্যান্য ধর্মের অনুসারী। 

সিকিমের অর্থনীতি

সিকিমের জীববৈচিত্র্য অত্যন্ত সমৃদ্ধ, এই রাজ্যের পাঁচ ভাগের দুই ভাগ অংশ জুড়েই রয়েছে বনভূমি। এছাড়া সিকিম ভারতের সবচেয়ে পরিবেশ-সচেতন রাজ্য ফলে এখানে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্য নিষিদ্ধ। যেহেতু এখানকার অধিকাংশ লোক গ্রামীণ জীবনে অভ্যস্ত তাই সিকিমের অর্থনীতিও প্রধানত কৃষিনির্ভর। ২০০৩ সাল থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে সিকিম তার কৃষি ব্যবস্থায় সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতি প্রয়োগ করতে সক্ষম হয়েছে। সিকিমের কৃষি পণ্যের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল বড় এলাচ। এটি ভারতের বৃহত্তম উৎপাদক রাজ্য এছাড়া গুয়েতেমালার পরে সিকিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এলাচ উৎপাদক।

অতীতে সিকিম ছিল একটি স্বাধীন দেশ পরবর্তীতে নানা ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে দেশটি ভারতের একটি রাজ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়।


 

No comments

Powered by Blogger.
close